বাতের ব্যথা কি?
বাতের ব্যথা হলো একটি ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা সাধারণত শরীরের সংযোগস্থলে (যেমন: হাঁটু, কনুই, হাতের আঙুল, পায়ের আঙুল) ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। বাতের রোগ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে এবং প্রত্যেকটি ব্যথা, সংক্রমণ, বা অস্থিসন্ধির ক্ষতি ঘটায়। বাতের সমস্যাটি সাধারণত আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত এবং এটি একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
কেন বাতের ব্যথা হয়?
বাতের ব্যথা সাধারণত অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের স্থানে প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে হয়। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
-
অস্থিসন্ধির ক্ষয় (Degeneration): বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অস্থিসন্ধির কার্টিলেজ ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে, যা অস্টিওআর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত। এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের বাতের সমস্যা।
-
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: কিছু ক্ষেত্রে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজস্ব অস্থিসন্ধিকে আক্রমণ করে, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর কারণ হতে পারে।
-
ইউরিক এসিডের জমাট বাঁধা: রক্তে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড জমা হলে তা জয়েন্টের মধ্যে জমাট বাঁধতে পারে, ফলে গাউট বা গেঁটেবাতের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
-
অতিরিক্ত ওজন বা আঘাত: অতিরিক্ত ওজন বা জয়েন্টে আঘাতের কারণে অস্থিসন্ধির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাতের প্রকারভেদ:
১. অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis):
এই প্রকার বাতের ব্যথা মূলত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘটে। অস্থিসন্ধির কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে যাওয়ার ফলে হাঁটু, কোমর এবং হাতের আঙুলের সংযোগস্থলে ব্যথা এবং অস্বস্তি দেখা দেয়।
২. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis):
এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজস্ব অস্থিসন্ধির বিরুদ্ধে কাজ করে। এর ফলে প্রদাহ, ব্যথা এবং জয়েন্টের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
৩. গাউট (Gout):
রক্তে ইউরিক এসিডের অতিরিক্ততা এই রোগের মূল কারণ। এটি সাধারণত পায়ের বড় আঙুলের জয়েন্টে তীব্র ব্যথার কারণ হয়।
৪. আঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস (Ankylosing Spondylitis):
এটি মেরুদণ্ডের জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে পিঠের ব্যথা ও স্পাইনাল ফিউজন দেখা দিতে পারে, যা মেরুদণ্ডের স্থায়ী স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করতে পারে।
৫. সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস (Psoriatic Arthritis):
যাদের সোরিয়াসিস আছে, তাদের মধ্যে এই ধরনের বাতের ব্যথা দেখা দিতে পারে। এটি জয়েন্টের প্রদাহ এবং ত্বকের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত।
বাতের ব্যথার লক্ষণ:
-
সংযোগস্থলে (জয়েন্ট) তীব্র ব্যথা
-
অস্থিসন্ধি ফুলে যাওয়া
-
স্থবিরতা বা জয়েন্টের মুভমেন্ট কমে যাওয়া
-
হাঁটু, কনুই বা পায়ের আঙুলে স্ফীতি ও জ্বালা
-
সকালবেলা জয়েন্টের কঠিনতা
বাতের সমস্যার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ:
১. ওষুধ:
বাতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো প্রদাহ কমাতে, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জয়েন্টের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে। যেমন NSAIDs, Disease-modifying antirheumatic drugs (DMARDs) ইত্যাদি।
২. নিয়মিত ব্যায়াম:
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হালকা যোগব্যায়াম বা সাঁতার বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী হতে পারে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই নিয়মিত ডায়েট এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যা এড়ানো যেতে পারে।
৪. গরম বা ঠাণ্ডা থেরাপি:
গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
৫. জয়েন্ট প্রতিস্থাপন সার্জারি:
যদি অন্য কোনো চিকিৎসা কার্যকর না হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে জয়েন্ট প্রতিস্থাপন সার্জারি করা যেতে পারে।